• রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||

  • ভাদ্র ২৪ ১৪৩১

  • || ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ষাট গম্বুজ বার্তা

কেন ধ্বংস করা হয়েছিল হুদ (আ.)-এর জাতিকে?

ষাট গম্বুজ টাইমস

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২৪  

হুদ (আ.) ছিলেন দুর্ধর্ষ ও শক্তিশালী ‘আদ’ জাতির কাছে প্রেরিত নবী। বিশ্ববাসীর জন্য শিক্ষার উপকরণ হিসেবে আল্লাহ তাআলা কয়েকটি জাতিকে ধ্বংসের কাহিনি কোরআনে তুলে ধরেছেন। তার মধ্যে আদ জাতি অন্যতম।

আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করেছেন। আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিশ্বের প্রধান ছয়টি জাতির মধ্যে নুহ (আ.) এর সম্প্রদায়ের পরে ‘আদ’ সম্প্রদায় ছিল দ্বিতীয় জাতি। হুদ (আ.) ছিলেন আদ বংশেরই একজন। ‘আদ ও ছামুদ ছিল নুহ (আ.)-এর পুত্র সামের বংশধর এবং নুহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধস্তন পুরুষ।

আদ জাতির পরিচয়

 

আদ সম্প্রদায়ের ১৩টি গোত্র ছিল। জর্ডানের আম্মান থেকে হাজারামাউত ও ইয়েমেন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তাদের বসতি। তাদের ক্ষেত-খামারগুলো ছিল সজীব ফল ফসলে পূর্ণ। তাদের ছিল সব ধরনের বাগ-বাগিচা। তারা ছিল সুঠাম ও দীর্ঘ দেহের অধিকারী।

সে সময়ে আদ সম্প্রদায়ের শক্তি ও বাহাদুরির খুব খ্যাতি ছিল। নিজেদের অর্থ সম্পদ, ফল-ফসল ও প্রাচুর্যের আধিক্যে তারা ভুলে যায় নিজেদের সৃষ্টিকর্তা ও রবকে। ভুলে যায় সঠিক পথে জীবনযাপন করার পথ ও পদ্ধতি। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে অহংকারী। আর ডুবে যায় মূর্তিপূজার গভীরে।

 

এরাই পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার মূর্তিপূজা ও শিরকের প্রচলন করে। তাদের ঘটনাবহুল জীবন ধারায় সর্বকালের মানুষের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের অশুভ পরিণতিতে রয়েছে বোধসম্পন্ন মানুষের জন্য ভাবনার খোরাক। চলার পথের পাথেয়। রবের অনুগত বান্দা ও প্রকৃত মানুষ হওয়ার বিবিধ উপকরণ।

 

আল্লাহর বান্দারা অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের ১৭টি সুরায় ৭৩টি আয়াতে হুদ (আ.) ও ‘আদ’ সম্প্রদায় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যাতে শিরক ও অহংকারের পরিণতি কী হয়, তা ভেবে যুগে যুগে বান্দারা সতর্ক হতে পারে।

 

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আদ সম্প্রদায়ের অহংকার ও পরিণতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের ঘটনা এই ঘটল যে, তারা পৃথিবীতে অন্যায় দম্ভ প্রদর্শন করতে লাগল এবং বলল,

"আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী কে আছে? তবে কি তারা অনুধাবন করল না, যে আল্লাহ তাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? মূলত তারা আমার আয়াতগুলো অস্বীকার করত। (সুরা ফুছছিলাত ১৫)।"

আদ জাতিকে ধ্বংসের কারণ

 

কোনো জাতির অন্যায় ও জুলুম যখন স্বাভাবিক আচরণে পরিণত হয়, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের প্রতি আজাব ও গজব ধেয়ে আসে। অহংকারে মানুষ যখন নিজের অস্তিত্ব ও অবস্থানের কথা ভুলে যায়, তখনই আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেয়। যেসব কারণে হুদ (আ.)-এর উম্মত আদ জাতি ধ্বংস হয়েছিল, তা নিচে তুলে ধরা হলো-

 

১. আদ সম্প্রদায় তাদের প্রতি প্রেরিত আল্লাহর নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। নবীর দাওয়াত গ্রহণ করেনি। নিজেদের মনগড়া পথেই অবিচল ছিল।

২. তাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহগুলোকে তারা অবমূল্যায়ন করেছিল, যার ফলে তারা আল্লাহর আনুগত্য হতে বিমুখ হয়ে শয়তানের আনুগত্য বরণ করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছিল।

৩. আল্লাহর নেয়ামতরাজিকে নিজেদের জন্য চিরস্থায়ী ভেবেছিল তথা দুনয়িার জীবনকেই একমাত্র জীবন ভেবে আখেরাতকে অস্বীকার করেছিল।

৪. আল্লাহর গজব থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন কল্পিত উপাস্যের ওয়াসিলা ধরে পূজা-অর্চনা শুরু করেছিল। একত্ববাদকে গ্রহণ না করে বহুত্ববাদকে গ্রহণ করে শিরকে লিপ্ত ছিল।

৫. তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করত; কিন্তু আল্লাহর গজব থেকে নির্ভীক ছিল।

৬. তারা অযথা উঁচু স্থানগুলোতে সুউচ্চ টাওয়ার ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করত, যা অপচয় ছাড়া কিছুই ছিল না। (সুরা শুআরা ১২৮)।

৭. তারা বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করত এবং ভাবত যেন তারা পৃথিবীতে চিরকাল বসবাস করবে। (সুরা শুআরা ১২৯)।

৮. তারা দুর্বলদের ওপর নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করত এবং মানুষের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাত। (সুরা শুআরা ১৩০)।

তুফান দিয়ে শাস্তি

 

মহান আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের প্রতি শাস্তি স্বরূপ প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া পাঠান। পবিত্র কোরআনে এর বর্ণনা এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন,

"আমি অশুভ কিছু দিনে তাদের প্রতি পাঠালাম প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া, তাদের দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করানোর জন্য। আর আখেরাতের শাস্তি তো আরো বেশি লাঞ্ছনাকর এবং (সেখানে) তারা পাবে না কোনো সাহায্য। (সুরা ফুছছিলাত ১৬)।"

তাফসিরে মাআরিফুল কোরআনে মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) তাফসিরে কুরতুবি ও মাযহারির উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন, যাহহাক বলেন, আল্লাহ তাআলা আদ সম্প্রদায়ের ওপর তিন বছর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত সম্পূর্ণ বন্ধ রাখেন। সে সময়ে শুধু প্রবল শুষ্ক বাতাস প্রবাহিত হতো। অবশেষে আট দিন ও সাত রাত পর্যন্ত উপর্যুপরি তুফান চলতে থাকে।

ষাট গম্বুজ বার্তা
ষাট গম্বুজ বার্তা